Powered By Blogger

My Blog List

Popular Posts

স্বাগতম

আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি

Total Pageviews

Pages

Sunday, May 26, 2019






ফকির ইলিয়াস এর পাঁচটি কবিতা


প্রার্থনারত মানুষের মুখ


এর বেশি কী কিছু চাওয়া ছিল আমার!
এর বেশি কী গাইতে চেয়েছিলাম উপপাদ্য সঙ্গীত!
হাত তোলে যারা প্রার্থনা করে,
কিংবা শ্ঙ্খধ্বনি দিয়ে যারা সাজায় অর্চনা
আমি তাদের কাতারেই দাঁড়াতে চেয়েছি।
পাঠ'কেই ধ্যান মনে করে মগ্ন থেকেছি দুপুরের দক্ষিণে,
গীর্জার ছায়াঘেরা সবুজকে ডেকেছি কাছে।

আমাকে ভালোবেসেছে প্যাগোডার পাখিরা,
হাতের পরশ নিতে ওরা উড়িয়েছে পালক
আর বলেছে, মানুষ হে !
তুমি মানবতা নিয়ে বাঁচো,মহিমান্বিত হও!

তারপরও আমাকেই হত্যা করতে আজ ‌উদ্যত
মানুষেরই হাত-
আমার সেজতারত ছায়ার দাগ মুছে দিতে
এগিয়ে আসছে কালো ছায়া-
অথচ ওরা কি জানে না,
মানুষের প্রার্থনাশক্তিকে বধ করা যায় না-
মানুষের ভালোবাসার বিপরীতে,
  দাঁড় করানো যায় যায় কোনও ঘৃণার প্রাচীর।



মুদ্রিত জীবনের অমুদ্রিত তৃষ্ণাগুচ্ছ


'ইহা একটি মুদ্রিত ছোটকাগজ'- শব্দগুলো দেখার পরই আমি জেনে যাই
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে এই গঞ্জে অনলাইন ভার্সনের কোনো অস্তিত্ব
ছিল না। ডিজিটাল ধ্বনি কন্ঠে নিয়ে কোনো কোকিল এখানে গাইতো না
গান। রিমিক্সড গীটার বাজিয়ে কেউ রুদ্ধ করে দিত না সানাইয়ের অপূর্ব
মিলনসন্ধ্যা। পরস্পরকে ভালোবেসে যারা হাত ধরাধরি করতো,তারা পরতো
না প্লাস্টিকের হাতমোজা। অথবা মাস্ক পরে আঁকতে চাইতো না নিভৃতের
চুম্বনদৃশ্য। অনেক কিছুই তখন মুদ্রিত ছিল। চাইলেই স্পর্শ করা যেতো
কাগজ ও কালির প্রকাশ।তাকালেই দেখা যেতো নিশ্বাসের নিশব্দ উঠা-নামা।
আমরা যারা ঐ গঞ্জে পাহারাদারের দায়িত্বে ছিলাম, তারা বাঁশি বাজিয়েই
হটিয়ে দিতে পারতাম রাতের তস্কর।এখন এখানে বহুমুখি শক্তির মহড়া হয়।
শান্তি কায়েমে নিয়মিত রাজসিক ঢাক-ঢোল বাজে। মুদ্রিত জীবনের অমুদ্রিত
তৃষ্ণাগুচ্ছ বুকে নিয়ে অসহায় কবি ভাবে, তাহলে কী আমি আরও বেশি
একাকী হয়ে যাবো !






ভাঙনের শব্দের মতো


শক্তিগুলো ঘুমিয়ে থাকে ভাঙনের শব্দের ভেতর।জলগুলো জমা হয়।অতিক্রম করে
যায় পাথরকে।পাথরের নিজস্ব কোনও দেশ না থাকায় ছড়িয়ে পড়ে যত্রতত্র।আর
যারা পাথর চেনে,তারা কেউ পরে নেয় আঙুলে।কেউ ছুঁড়ে দেয় নদীতে। নদীর
নীচে এপর্যন্ত যে পাথরগুলো জমে আছে-;তা মানুষেরই হাতে ছোঁড়া। অথবা বলা
যায় নিক্ষেপিত।
.
ভাঙনের শব্দের মতো পৃথিবীতে মধুর কোনো শব্দ নেই। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে
যারা এই দৃশ্য দেখেছে,কেবল তারাই বলতে পারবে,ওপারে জেগে ওঠা চরে ‌উড়ে
যে নিশান- তা একসময় কোনো মানুষের শবদেহ ঢেকে দেয়া অবশিষ্ট তুলোর
অংশ। কোনো অভিযান শেষ করা বীরের রক্তফুলকি।



জল ছিটানো ঘুম 


তন্দ্রা এবং তন্ত্রে কেটে গেছে কয়েকটি মহাকাল।
কয়েকলক্ষ পৌষের শীত, জুবুথুবু করে রেখেছে
পাখিদের জীবন। যেসব মানুষ পরিন্দার প্রতিবেশী,
তারাও বন্দী হয়ে পড়েছে আঁটোসাটো পলেস্তারার
ভেতর। থেমে যাচ্ছে প্রদক্ষিণরত সূর্য।

বিগত এমন ইতিহাস অস্বীকার করতে চাইছে
আমাদের ভালোবাসার সাম্পান। ঢেউ ভাঙছে
যে নদী- তাকে সাক্ষী রেখেই লিখতে চাইছে
জীবনের নতুন পরিচ্ছেদ।

মাটিতে জল ছিটাচ্ছে যে ঘুমময় চোখ, মানুষ
তার শুশ্রূষা চেয়ে করছে বিনম্র প্রার্থনা-
পুনরায় লিখিত হোক নতুন সূচিপত্র,
আবার উচ্চকিত হোক বলিষ্ঠ বাহু-
এমন বরণের গানে সুর তুলে, চাঁদের দিকে
না তাকিয়েই মধ্যরাতে বাড়ি ফিরছে
দীনহীন গায়েন।






ধ্বংস হোক দানবিক স্বর


যীশুর ভাস্কর্যে যে রক্তের দাগ লেগে আছে সেই রক্ত আমার,
মসজিদে সেজদারত অবস্থায় যাকে হত্যা করা হয়েছে,
তিনি আমার পিতা। মন্দিরের চারপাশে পড়ে থাকা
শবদেহগুলো সনাক্ত করতে করতে যিনি কাঁদছেন,
তিনি আমার মা।নদীভাঙনের শিকার হয়ে যিনি হারিয়েছিলেন
ভিটেসূত্র,ভালোবাসা এবং ভবিষ্যত।

প্রাতরাশ করতে গিয়ে যে শিশুটি আজ বোমার আঘাতে
নিহত হয়েছে, সে আমার আত্মজ!
বড়ই বিমূঢ় আমি আজ- বড়ই অসহায় এই পৃথিবীর কাছে

তবে কি খুনের বদলে খুন চাইবো আমি!
তবে কি হত্যার বদলে হত্যা করতে চাইবো এই প্রকৃতি!

বিষাদে আকাশ কেঁপে উঠছে। কাঁদছে- জল,নদী,দ্বীপ
কোথায় মানুষ আজ!কোথায় মানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত!
'ধ্বংসের কিনারে বসে'-যে কবি একদিন কেঁদেছিলেন
আমি তাঁর পদরেখার দিকে তাকাই। নিশ্বাস নিতে
ভুলে যেতে যেতে আবারও বলি, ধ্বংস হোক দানবিক স্বর-
পৃথিবী হে, তোমার শুদ্ধ ছায়া বিতরণে আমি পুনরায়
স্বেচ্ছাসেবক হতে চাই ।