Powered By Blogger

My Blog List

Popular Posts

স্বাগতম

আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি

Total Pageviews

Pages

Saturday, October 17, 2009

চারাপ্রথা


চারাপ্রথা
========
(কবি আবু মকসুদ প্রীতিভাজনেষু )


জোনাকীরা বড় সাধ করে পরে নেয় তিথিথান। ওরা জ্বলে
এবং আলো দিয়ে ভাসিয়ে দেয় চন্দ্রের প্রস্থানপথ। আমি
চেয়ে থাকি । আর পাঠ করি বর্ষার বীজবাক্য। চাওয়ার খুব
বেশী কিছু নেই। ঘাটে নোঙর ভিড়িয়ে যে মাঝি নদীতীরেই
করছে জলপান, আমি তার সহযাত্রী হবার জন্য হাত বাড়াই।
হাত দুটি খালি ফিরে আসে। ভেসে গেলে পদ্মও রেখে যায়
তার ছায়াগন্ধ। তার চারপাশে বিলি কাটে ক'টি ভ্রমণ বিলাসী
দিন। উন্মেষ ছড়াবে বলে আষাঢ় ও বিছিয়ে দেয় তার দিঘীদেহ।
আমি তারও পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে স্পর্শ করি রোদের আল। কাছে
আসে আরো কিছু বিন্দুবিষাদ। চারাপ্রথায়,বিভাজিত হই।একটা
শিকড়, পাতাল ছুঁবে বলে সাকিনে ফিরে -আর খুঁজে রঙের অথই ।

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও সুনিশ্চিত সুশাসন
ফকির ইলিয়াস
----------------------------------------------------------------
রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, শ্লোগানটি বেশ পরিচিত। তা বলেন অনেকেই। প্রায় প্রতিটি দলের ম্যানিফেস্টোতে সে কথাটি আছে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশে জনগণের প্রত্যাশায় কি রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালিত হয়? না, হয় না। আর হয় না বলেই শাসক শ্রেণীর আশপাশে তোষামোদকারী ফড়িয়া শ্রেণী ভিড়তে পারে। স্বার্থবাদী একটি পক্ষ কলুষিত করতে পারে মানুষের স্বপ্নকে।
বাংলাদেশে একটি বিতর্ক এখন বেশ তুঙ্গে। তা হচ্ছে, উপজেলা চেয়ারম্যান বনাম স্থানীয় সাংসদদের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। কে কি করবেন, সেই রুটিন নিয়েও চলছে মতবিরোধ। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে দুটি পদই সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত। সাংসদ এবং উপজেলা চেয়ারম্যান দু'জনই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তারপরও স্থানীয় সাংসদরা একটা বিশেষ দাপট দেখাবার প্রয়াসী হচ্ছেন। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা সরাকরের সহযোগিতাও পাচ্ছেন বেশি।
এই যে দ্বন্দ্ব, এর প্রধান কারণটি হচ্ছে রাজনৈতিক দলবাজির প্রভাব। যেহেতু উপজেলা তথা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার জনপ্রতিনিধিরা সরাসরি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নির্বাচন করতে পারেন না, তাই তারা সে পরিচয়ও দিতে পারেন না। আর সেই সুযোগ কাজে লাগান দলীয় সাংসদরা। ফলে স্থানীয় সাংসদ এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের মাঝে যে ঐক্য গড়ে ওঠার কথা ছিল, তা ওঠেনি কিংবা উঠছে না। দ্বন্দ্বটা সেভাবেই প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে।
বিশ্বের উন্নত অনেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দু'স্তর বিশিষ্ট জনপ্রতিনিধি প্রথা চালু রয়েছে। ভারতে রয়েছে স্থানীয়-প্রাদেশিক প্রশাসন। আর রয়েছে কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) প্রশাসন। একই অবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটর প্রথার পাশাপাশি রয়েছে স্টেট গভর্নমেন্ট এবং ফেডারেল গভর্নমেন্ট। প্রতিটি স্টেটেও রয়েছে স্টেট সিনেটর, স্টেট কংগ্রেসম্যান প্রথা। এই যে দু'স্তর বিশিষ্ট প্রতিনিধি হাউজ, সেখানে কিন্তু এক পক্ষের সঙ্গে অন্য পক্ষের কোন বৈরিতা নেই। কেন নেই? কারণ দু'টি পক্ষই রাষ্ট্র এবং সুশাসনের পক্ষে ক্ষমতা প্রয়োগে বিশ্বাসী।

সেখানে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের কোন সুযোগ এবং ইচ্ছা কারোরই নেই। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এই রাজনৈতিক সম্প্রীতিই জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার বিশেষ সহায়ক হয়েছে। খুলে দিয়েছে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রশস্ত পথ।
প্রায় পনেরো কোটি মানুষের বাংলাদেশে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং তৃণমূল পর্যায়ে গণমানুষের স্বপ্ন পূরণের কথাটি অনেক সংগঠনই বলে আসছে। এর বাস্তবায়নে কাজ করা প্রয়োজন। কারণ মজবুত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে গ্রামীণ জনপদ তথা গোটা রাষ্ট্রের মৌলিক অবকাঠামোর উন্নয়ন সম্ভব নয়।

আমার জানা মতে, স্থানীয় সরকার বিষয়ে দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর ধরে কাজ করছেন একজন সংগঠক, গবেষক। তার নাম আবু তালেব। তিনি যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী হলেও, বাংলাদেশের মানব সম্পদ ও স্থানীয় সরকারের উন্নয়নে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
অতি সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠিত অর্গানাইজেশন 'সেন্টার ফর ডেমেক্রেটিক লোকাল গভার্নেন্স'-এর পক্ষে একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছেন নির্বাহী পরিচালক আবু তালেব। আর তা হচ্ছে- 'গণস্বপ্ন ২০২০ : উন্নত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ - ২০২০'।
সংগঠনটি যে সব দাবিগুলোর বাস্তবায়ন চেয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে তার প্রধান কিছু দাবির সঙ্গে সহ মত পোষণ করে আলোচনায় যেতে চাই।

ক. যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় সরকারের অধীনে সব নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এর বিভিন্ন ধারা সংশোধন করে গণমুখী নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

খ. ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ণ সুনিশ্চিত এবং সমানুপাত করতে হবে। তাদের জন্য সরকারি ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে।

গ. ইউনিয়নের সংখ্যা ৪৪৯৮টি থেকে কমিয়ে ৩০০০টিতে এনে সিস্টেম কস্ট হ্রাস করার উদ্যোগ নিতে হবে। সব স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনের মেয়াদ চার বছর করতে হবে।

ঘ. কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত কর্মকর্তাদের জাতীয় এবং বৈশ্বিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারগুলোর দায়িত্ব পালনে গঠনমূলক সহযোগিতা দিতে হবে।

মোট সতেরো দফা দাবিনামার পক্ষে কাজ করছে সংগঠনটি যদিও সব ক'টি দাবি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানা সম্ভব নয়। কোন সরকার তা মানবেও না।
কতটা জনগণ সংশ্লিষ্ট হলে একটা দাবি জাতীয় সংসদে পাস হয়_ তার উদাহরণ বাংলাদেশের মানুষের অজানা নয়। যে সব সাংসদ জাতীয় সংসদকে সব প্রত্যাশার কেন্দ্র বিন্দু বলে দাবি করেন, সেই সংসদেই কোরাম সঙ্কট দেখা দেয়। বাংলাদেশে তা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার।

বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারকে গণমুখী করলে কিংবা করতে পারলেই গণতন্ত্রের চর্চা এবং ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে সন্দেহ নেই।

কিন্তু এর প্রধান অন্তরায় হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। কিছু কিছু শীর্ষ নেতাকে বলতেও শুনেছি, স্থানীয় পর্যায়ে সবল নেতৃত্ব বৃদ্ধি পেলে তাদের নিজেদের জন্যই নাকি 'ফ্রাংকেনস্টাইন' তৈরি হয়। তাই তারাই কেন্দ্রে অবস্থান করে সব কলকাঠি নাড়তে চান। এবং নেড়েও যাচ্ছেন।
বর্তমান জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে আওয়ামী লীগের। অতি সম্প্রতি আমরা দেখলাম স্পীকার আবদুল হামিদ নিজের দলের, নিজের সরকারের, সংসদে উপস্থিতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তা নিয়ে বিরোধীদল সমালোচনার মওকাও পেয়েছে। এর জবাবে পাটমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, স্পিকার মহান সংসদের প্রভু নন, সেবক।
তাদের এই বচসা যদি লোক দেখানো না হয়, তাহলে তো আমরা ধরে নিতে পারি সরকারের ভেতরে একটা নীরব স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। এটা কিসের লক্ষণ?
মন্ত্রীরা রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে ব্যস্ত থাকায় সংসদে আসতে পারবেন না বা পারেননি, এমন অজুহাত থাকতেই পারে। কিন্তু এর সমন্বয় সাধিত হচ্ছে না কেন?

প্রধান বিরোধীদল সংসদে আসছে না। ছাড় দিয়ে হলেও এই বিষয়টি সমাধান করা উচিত সরকার পক্ষের। কারণ জনগণের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মানতে হবে সর্বাগ্রে।
নিউইয়র্ক, ১৩ অক্টোবর ২০০৯।
-----------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ ।ঢাকা । ১৬ অক্টোবর ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত

ঝড় ভেঙে ,ঋতুদের খোঁজে


আলোর ইশারা পেয়ে যে জীবন শুরু করে দিন
তাকেই স্বাগত সুরে করে যাই বিনীত প্রকাশ
অনাদি প্রেমের কাছে যে হৃদয় থেকে যায় দাস
আমি তার পাশে থেকে এই মাটি করি প্রদক্ষিণ।

একদা সমুদ্র ছিল , আকাশের প্রথম নীলিমা
চাঁদের দুপাশে মেঘ করেছিল সুদূর ভ্রমণ
এবং ভাবের দেশে সেরেছিল সব আয়োজন
মেঘের নিরিখে মন খুঁজেছিল তার প্রিয়তমা।

সকল গন্তব্য এসে এভাবেই মিলায় ফাগুনে
বসন্ত বিভায় জাগে কলমের প্রাচীন উন্মেষ
প্রণয় পাঁজরে আঁকা হয়ে উঠে প্রণীত স্বদেশ
কালের প্রহরগুলো ছুটে চলে নদীদের টানে ।

ক্রমশ: বৃষ্টির মতো ঝরে প্রেম পাপড়ির বীজে
মানব-মানবী যায় ঝড় ভেঙে , ঋতুদের খোঁজে ।

Monday, September 21, 2009

কাজের বিনিময়ে গদ্য


কাজের বিনিময়ে গদ্য
==============
পরিকল্পনা টা ছিল তার
যে কি না একটা যৌথ খামার
করতে চেয়েছিল আমার সাথে

আমি শুধু খাটনি দেবো কোনো পুঁজি নয়
যে ভাবে 'কাজের বিনিময়ে খাদ্য ' কর্মসূচি পালিত হয়
আমাদের মাটির পাড়াতে

ও বললো , না- তার চেয়ে বরং কাজের বিনিময়ে
দাও না একটা গদ্য , পাঠিয়ে
কোনো অপরিচিত ছোটো কাগজে

যারা পড়ে এবং পড়ায় অন্যকে
আর থাকে ব্যস্ত জলামূলে, প্রথম সবকে .....
করো তাদেরকেই উৎসর্গ

একটা পলাশ কিংবা তাজা ঝিনুকের লাশ
যদি কেউ সমুদ্রের সাথে করতে চায় সহবাস
হোক না তারা জলদাশ কিংবা আরো নিম্নবর্গ ।

বিক্রীত জীবন ও সভ্যতার বিন্যস্ত নখর


বিক্রীত জীবন ও সভ্যতার বিন্যস্ত নখর
ফকির ইলিয়াস
====================================
সময় পেলেই আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন অভিজাত গ্রন্থবিপণি ঘুরে আসি। নিউইয়র্কে 'বার্নস এন্ড নবলস'-এ আমাদের যাওয়া হয় প্রায় প্রতিমাসেই। বই কেনা, বইপড়া আমার নেশা। আমার দুই মেয়েও বই কিনতে, পড়তে ভালবাসে। আমি তাদের বই কিনে দিতে কখনই কার্পণ্য করি না। সাধারণত 'বার্নস এন্ড নবলস'-এ গেলে আমি আমার পছন্দমতো বইয়ের সেকশনগুলো ঘুরে দেখি। কখনও সেখানে ফ্লোরে বসেই পড়া শুরু করে দেই।

সেদিনও গিয়েছিলাম বই দেখতে, বই কিনতে। ঘুরতে ঘুরতে একটি বইয়ে আমার দৃষ্টি গিয়ে থামল। বইয়ের প্রচ্ছদটিই আকর্ষণীয়। একজন ভারতীয় টিনএজের ছবি। হাতে নিয়ে বইটি পড়া শুরু করলাম। বইটির নাম- সোল্ড (SOLD)। অর্থাৎ বিক্রীত কিংবা যা বিক্রয় হইয়াছে। বইটি কবিতার। ফলে আমার আগ্রহ বেশ বেড়েই গেল। বইটি লিখেছেন-প্যাট্রিশিয়া ম্যাককরমিক। খুব খ্যাতিমান কেউ, এমনও নয়। তারপরও কাব্যগ্রন্থটি উঠে এসেছে বেস্ট সেলারে। পেয়েছে পুরস্কারও।

সূচনাতেই বলা হয়েছে, গ্রন্থটি লিখতে গিয়ে লেখিকা ভারত এবং নেপাল সফর করে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। তার অভিজ্ঞতালব্ধ চিত্রই ফুটে উঠেছে গোটা গ্রন্থের পঙ্ক্তিমালায়।
গ্রন্থটির অন্যতম চরিত্র ''লক্ষ্মী ''নামের একজন কিশোরী। হিমালয়ের তান্ডবে ওদের শস্যজমি বিনষ্ট হয়ে যায় পুরোপুরি। সংসারে সৎপিতার তদারকি ছিল। শুরু হয় চরম টানাপড়েন। একদিন সৎপিতা লক্ষ্মীকে তুলে দেয় একটি দুষ্টচক্রের হাতে। লক্ষ্মীকে বলা হয় ওকে কাজের খোঁজে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু ক'দিন পরই লক্ষ্মী বুঝতে পারে ও বিক্রি হয়ে গেছে। তাকে লিপ্ত করানো হয় আদিম পেশায়। লক্ষ্মীর জীবনে নেমে আসে মুখোশপরা সমাজের পাশবিক নির্যাতন। একজন কিশোরী লক্ষ্মীর জীবনযাত্রা শুরু হয় এমন অশুভবৃত্তির মাধ্যমেই।

এই গ্রন্থটিতে আরও বেশকিছু চরিত্রের বর্ণনা আছে। ওদের নাম- শাহানা, শিল্পা, প্রিয়া ইত্যাদি। ওদের নিয়ন্ত্রণ করে 'মমতাজ' নামের এক প্রৌঢ়া। সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা, একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, এমন দৃশ্যকল্প নতুন কিছু নয়। গণিকাবৃত্তি এভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তারপরও একজন মার্কিনি কবির বর্ণনায় এই 'বিক্রীত জীবন' উপাখ্যান এত বাজার পাচ্ছে কেন? তার একটিই কারণ, গ্রন্থটির লেখিকা তার লেখার প্লট হিসেবে থার্ড ওয়ার্ল্ডকে বেছে নিয়েছেন। ভারত-নেপাল অঞ্চলটি হয়ে উঠেছে তার অন্যতম পছন্দ।

ধনী-সভ্য দেশগুলো, তৃতীয় বিশ্বকে তাদের পর্যবেক্ষণের মাঠ হিসেবে দীর্ঘ সময় থেকেই বিবেচনা করে আসছে। ওই অঞ্চলের মানুষের জীবন, মন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও কখনও হয়ে উঠেছে তাদের খুব বেশি 'এক্সপেরিমেন্টাল সাবজেক্ট/ অবজেক্ট '। জীবনকে বাঁচানোর বদলে, বরং জীবনকে কেটে ছিঁড়ে তাদের তত্ত্বজ্ঞান প্রতিষ্ঠায়ই ব্রত হয়েছে কোন কোন মহল। যা মানবতাকে শুধু হত্যাই করেনি, কলঙ্ক লেপে দিয়েছে গোটা মানব সমাজের চোখে-মুখে।

'সোল্ড' গ্রন্থটিতে গ্রন্থকার যে বর্ণনার বুনন নির্মাণ করেছেন তা কি ইউরোপ আমেরিকায় নেই? হ্যাঁ, এখানেও আছে। তারপরও প্রাচ্যের কোন লেখকের কলম দিয়ে সমাজের পচন কিংবা ধর্মের দিকগুলো তুলে ধরিয়ে বাজার মাত করার চেষ্টা কেন হচ্ছে? তার প্রধান কারণ দুটি। প্রথমটি হচ্ছে বিশ্বে মোড়লিপনা ধরে রাখা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মুনাফার বাণিজ্য বর্ধন। এ প্রসঙ্গে আমি একটি ঘটনার কথা বলি। যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাংবাদিক চার্লস জিরহাম এক আড্ডায় জানাচ্ছিলেন তার মস্কো সফরের অভিজ্ঞতার কথা।

তিনি ১৯৭৭ সালে সে সময়ের বৃহৎ সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। চার্লস তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, কমিউনিজমের সে সময়ের তীর্থস্থান সোভিয়েত ইউনিয়নে বাড়তি দুটো ডলারের জন্য তরুণীরা উদগ্রীব থাকত। অনেক মার্কিনী ধনকুবের পর্যটকরা সেই আয়েশ গ্রহণের জন্য ছুটে যেতেন মস্কো অভিমুখে। পুঁজিবাদী যুক্তরাষ্ট্রের ডলার এভাবেই গিয়ে হাতে হাতে উড়ত মস্কোর গণিকামহলে।

ধরা যাক এই যুক্তরাষ্ট্রের কথাই। এখানে কি টিনএজরা সামাজিক সভ্যতার বিন্যস্ত নখর থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ? না, নিরাপদ নয়। মধ্যরাতের টিভিতে 'মিসিং কিডস্' এর ছবিসহ বিবরণ দেখলে গা শিউরে উঠে। পনেরো-আঠারো বছরের কিশোরী। ২০০১ থেকে নিখোঁজ রয়েছে! মানব-শিশুকল্যাণ সংস্থার এমন বিজ্ঞাপন দেখলে পাঁজর ভেঙে যায়। একজন পিতা হিসেবে চোখ জলে ভেসে যায়! হায় জীবন! ন' বছর ধরে নিখোঁজ মেয়েটি এখন কোথায় আছে? কেমন আছে? বেঁচে আছে কি? এমন অনেক ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খায়।

অপ্রাপ্ত বয়স্কদের যৌন নির্যাতনে বাধ্য করতে তৃতীয় বিশ্ব এবং প্রথম বিশ্বের মাঝে একটি পার্থক্য আছে। তা হচ্ছে আইনি বাধ্যবাধকতা এবং আইনি সহায়তা। তৃতীয় বিশ্বে বাল্যবিবাহ, শিশু নির্যাতন, সামাজিক অনাচারের সুবিচার হয় না। সুবিচার পাওয়া যায় না। প্রথম বিশ্ব সে বিষয়ে অত্যন্ত সোচ্চার ও সজাগ। ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও সেবা দিতে সর্বদা প্রস্তুত। তারপরও প্রথম বিশ্বে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চুরি, পাচার, গ্রেভইয়ার্ড থেকে মৃত মানুষের হাড়গোড়-খুলি চুরি, সমাধি থেকে মূল্যবান ধাতু নির্মিত ফলকগুলো চুরির মতো জঘন্যতম ঘটনাও ঘটছে। সেসব ঘটনার খন্ডচিত্র তৃতীয় বিশ্বের মানুষ খুব কমই জানছে, জানতে পারছে। কারণ তা দেখার জন্য, দেখে গ্রন্থ লেখার জন্য যে সাধ্যের দরকার তা নেপাল কিংবা বাংলাদেশের একজন দরিদ্র লেখকের নেই। অথচ মার্কিন লেখিকা প্যাট্রিশিয়া ম্যাককরমিকের সে সাধ্য আছে বলেই তিনি গ্রন্থ লেখার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ভারত-নেপাল ছুটে যেতে পারছেন। অথবা তার প্রকাশনা সংস্থা স্পন্সর করে, খরচ দিয়ে তাকে নির্দিষ্ট অঞ্চলে পাঠাচ্ছে। নিজেদের সহস্র অন্ধকার মিথ্যায় ঢেকে, তৃতীয় বিশ্বকে তুলে ধরা হচ্ছে, প্রথম বিশ্বের কাছে চরম মানবতাবিরোধী ভূখন্ড হিসেবে। ফলে ভারত-নেপাল-বাংলাদেশের যে প্রজন্ম যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা কিংবা ইংল্যান্ড-ফ্রান্সে জন্মেছে, তারও বিরূপ ধারণা হচ্ছে পিতা-পিতামহের শিকড় সম্পর্কে। প্রপিতামহের নাড়িপোঁতা সেই রাষ্ট্রভূমি সম্পর্কে।

বিশ্বের চারপাশে ঘটে যাওয়া অমানবিক, অমর্যাদাকর, বর্বর ঘটনাবলির দৃশ্যচিত্র একজন কবি কিংবা লেখক তার লেখায় তুলে আনতেই পারেন। কিন্তু এসব স্থাবর কাঁটাগুলো দূর করবে কে? দূর করতে এগিয়ে আসতে হবে রাষ্ট্রপক্ষকে। পারস্পরিক সৌহার্দ্য, রাষ্ট্রীয় আইনের উপাদান বিনিময়, সংহতির শক্তিচর্চা সর্বোপরি মানবিক বিবেক জাগ্রত করে তোলার মাধ্যমেই এসব সামাজিক অনাচার রোধ করা সম্ভব।

আমরা দেখছি, নন-গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন (এনজিও) এর নামে পাশ্চাত্যের একটি শ্রেণী প্রাচ্যে গিয়ে কর্মকান্ড চালালেও নেপথ্যে এক ধরনের শোষণের মনোবৃত্তি লালন করছে কেউ কেউ। এমন মানসিকতার চির অবসান প্রয়োজন। বিক্রীত মানব জীবনকে উপজীব্য করে যারা যশ এবং অর্থ দুটোর পেছনে ছুটছেন, তাদের অজানা নয় মানবতাবোধই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তির নাম। কিন্তু তারা তার পরিচর্যা করছেন না।

বিক্রীত জীবনের গ্লানি আমাদের যেমন পীড়া দেয়, ঠিক তেমনি সভ্যতার বিন্যস্ত নখরও আমাদের আতঙ্কিত করে তোলে সমানভাবে। একজন কবি যেমন সুন্দরের পূজারি, একজন কৃষকও তেমনি সুন্দরের বিবর্তক। তার ফলানো ফসলের হাসি, ধানচারার সবুজ মাঠে বয়ে যাওয়া ঢেউ আমাদের আশায় নবতর দোলা দিয়ে যায়। রাষ্ট্র ও সমাজের প্রধান শত্রু 'দারিদ্র্য' 'অভাবের তাড়না'-ই সৃষ্টি করে ক্ষত। তাই আবারও বলি, দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বই হতে পারে প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। #

http://media.somewhereinblog.net/images/FAQIRELIASblog_1253241142_1-26956224.jpg

Thursday, January 8, 2009

মাঝে মাঝে খুব বেশি ভুল করে ফেলি


মাঝে মাঝে খুব বেশি ভুল করে ফেলি। অভিমানী পৃথিবীর
দিকে তাকিয়ে দেখি ক্ষয়িষ্ণু বোধের বিকেল, আমাকে গ্রাস
করতে এগিয়ে আসছে। যারা আমার সাথী ছিল , তারা সবাই
বেছে নিয়েছে অকাল অবকাশ। পেরিয়ে মধ্যবয়স তারা আর
কোনো নদীতেই কাটতে পারছে না সাঁতার।অথচ আমরা বার
বার ভাসবো- ডুববো , তারপর কৌশলী ডুবুরীর মতো ভিড়ে
যাবো রৌদ্র উপকূলে, এমন একটা প্রত্যয় ছিল খুব গোপনে।

সব গোপন , সকল সময় আর লুকানো থাকে না। রহিত রাত
এসে আলিংগন করলে একান্ত বিরহ ও হয়ে যায় মায়াবী বুনন।
বীজ আর বীক্ষণের শিয়রে বসে শুধু হাত নাড়ে ভুলের রুমাল।
সে ও ধারণ করে রেখেছে কিছুস্মৃতি,বৈশাখে আমাকে দেবে বলে।

মৌলবাদ যেভাবে সমকালকে ধ্বংস করে দেয়


মৌলবাদ যেভাবে সমকালকে ধ্বংস করে দেয়
ফকির ইলিয়াস
--------------------------------------
মৌলবাদ দমনে বিশ্বের নীতিনির্ধারকরা প্রকৃতপক্ষে আন্তরিক কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, মৌলবাদ সব সময়ই সামন্তবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে ভেঙে খান খান করে দিতে পুঁজিবাদীরা এটাকে ব্যবহার করেছে। এমন কি গোত্রগত সংঘাত চাঙ্গা করে রাখতেও ব্যবহৃত হয়েছে মৌলবাদী দানতন্ত্র। তবে কি পরোক্ষভাবে গণতন্ত্রই মৌলবাদের সহচর? আসতে পারে সে প্রশ্নটিও।
দেখা গেছে, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার নামে কোন কোন দেশে মৌলবাদকে উসকে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- এটাও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পুঁজিবাদীরা একে ব্যবহার করেছে তাদের প্রয়োজনে। পরে দেখা গেছে এভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে বিষবাষ্প। দূষিত হয়ে গিয়েছে ক্রমশ! গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী গণতান্ত্রিক মানুষের নিঃশ্বাসের আবাসস্থল।
সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে ইরাকের কথাই ধরা যাক। ইরাকের শাসক সাদ্দাম হোসেন স্বৈরাচারী ছিলেন। ইরাক শিয়া অধ্যুষিত দেশ। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভোট হলে শিয়ারা ক্ষমতায় থাকবে সারাজীবন। সুন্নী পন্থী সাদ্দাম হোসেন টুঁটি চেপে ধরে ছিলেন। ক্ষমতায় ছিলেন বলপূর্বক। এই সাদ্দাম একসময় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের। সে সম্পর্কে ফাটল ধরার পরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শাসকদের কাছে চোখের বালিতে পরিণত হন।
সাদ্দামের দেশ ইরাকে গণবিধ্বংসী পরমাণু অস্ত্র আছে, এমন ধুয়া তুলে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর যুদ্ধ বাধায়। সে যুদ্ধ এখনো চলছে। ইরাক এখন ধ্বংসস্তূপ। তারপরও পুঁজিবাদীর দৃষ্টি সেখানে প্রসারিত। নেপথ্য নিয়ন্ত্রণ রাখার মরিয়া প্রচেষ্টা চলছে। অন্যদিকে বিদ্রোহীরা মৌলবাদী লেবাসে হোক আর জঙ্গিবাদী লেবাসে হোক প্রতিদিন চোরাগোপ্তা হামলা করছে। শেষ সময়ে এসে আক্রান্ত হয়েছেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। একজন সাংবাদিক বুশকে জুতো নিক্ষেপ করেছেন। তার নাম মুন্তাজার আল যাইদী। জাইদীর ক্ষোভ ছিল ভীষণ, তিনি স্বজন হারিয়েছেন এই যুদ্ধে। নিজে বন্দি থেকেছেন। ইরাক যুদ্ধে নিহত মানুষের লাশ জাইদীকে ব্যথিত করেছে। তিনি তার ঘৃণার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এমন ঘৃণা পুঁজিবাদী দুঃশাসন এবং মৌলবাদী হায়েনা দুটোকেই উসকে দেয়। বুশের মাথার ওপর দিয়ে একজোড়া জুতো উড়ে যাওয়ার পর বুশ সাংবাদিকদের হেসে কি বলেছেন- সেটা দেখুন। বুশ মসকারা করে বলেছেন- ‘ইট ওয়াজ এ সাইজ টেন’! অর্থাৎ জুতা জোড়া দশনম্বর ছিল। ভাবটা যেন এমন, চৌদ্দ নম্বর জুতা তার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেলেও তার কিছু যায় আসে না! এর কারণ কি? কারণটি হচ্ছে সামন্তবাদ ধরে রাখতে হলে এমন ঘটনাবলী সহজে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতেই হয়! বুশ জানেন, ইরাক যুদ্ধে চার হাজার দুইশ’র বেশি মার্কিনী সৈন্য প্রাণ দিয়েছে। পরিসংখ্যানটি সরকারি। বেসরকারিভাবে এর সংখ্যা বেশি হতে পারে। আর কতজন ইরাকি প্রাণ দিয়েছে এর হিসাব শুধু মহাকালই জানে। ইরাকে বর্তমানে শিয়া-সুন্নির মাঝে যে গৃহযুদ্ধ চলছে এর শেষ কোথায় তা স্বয়ং বুশও জানেন না। তবে বুশ এ জন্যই সন্তুষ্ট, তিনি যুদ্ধটি বাধাতে পেরেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মিস কন্ডোলিৎসা রাইস বলেছেন, ইরাকীরা যে তাদের মৌলিক স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে, এই ঘটনা তার প্রমাণ। কি আহাম্মকি মার্কা কথাবার্তা! ইরাকে কি তাহলে আগে মৌলিক স্বাধীনতা ছিল না? অবশ্যই ছিল, বরং শিয়া-সুন্নির মাঝে গোত্রগত স্থায়ী সংঘাতের জন্ম দিতে পেরে সে স্বাধীনতায় কেরোসিন ঢেলে দিয়েছে পুঁজিবাদীরা। দোহাই দিয়েছে মৌলবাদের। আর এ সুযোগে কাগুজে বাঘ বিন লাদেনের নামে জোশ পেয়ে মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে উঠেছে অনেক আত্মঘাতী স্কোয়াড। এরা নানাভাবে তটস্থ রাখছে গোটা বিশ্বকে।
ধরা যাক আলজিরিয়ার কথা। সেখানেও গোত্রীয় সংঘাত বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে এই মৌলবাদী ঝা-াকে বাঁচাবার জন্য। উপমহাদেশে হিন্দু মৌলবাদ, মুসলিম মৌলবাদ- এই দুয়ের চরিত্রই আমরা জানি। মৌলবাদ এভাবেই ব্যবহৃত হচ্ছে জঙ্গি গ্রুপের হাতে, পুঁজিপতি শাসকদের হাতে, মুনাফাখোর বণিকদের হাতে। সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে মৌলবাদের মাধ্যমে প্রকারান্তরে চলমান সমকালকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে এরা। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে গোঁড়া মৌলবাদীরা সভ্যতার নান্দনিক বিবর্তনকে স্বীকৃতি দিতে মোটেই রাজি হয় না। আর বুনিয়াদী স্বার্থপর মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষকরা সভ্যতা-সংস্কৃতিকে লোক দেখানো স্বীকৃতি দিলেও এটাকে তারা বাণিজ্যকরণের সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। আর বাণিজ্য করতে গেলে তখন প্রগতিবাদ ও মৌলবাদ মিশে একাকার হয়ে যায়। ড. আহমদ শরীফ এই মিশ্রণকে চমৎকার অভিধায় ভূষিত করেছিলেন। তিনি বলতেন, সুবিধাবাদী প্রগতিবাদ ও কট্টর মৌলবাদ মিলে জন্ম নেয় ‘প্রলয়বাদ’। আর এই প্রলয় ধ্বংস করে দেয় মানুষের অগ্রসর হওয়ার সব স্বপ্নমালা। বন্ধ করে দেয় সমাজের উন্নয়নের সব মুক্তপথ।
সমকাল সব সময়ই পরিবর্তনকে সূচি করে অগ্রসর হতে চায় আর দানবিক পেশিশক্তী এক ধরনের ত্রাস সৃষ্টি করে বিনষ্ট করতে চায় সামাজিক সম্প্রীতি। বাংলাদেশে যখন ভোটের রাজনীতি শুরু হয় তখন এসব মৌলবাদী গোষ্ঠী একদিকে অপতৎপরতা চালায়, অন্যদিকে ভোটও চায় সাধারণ মানুষের কাছে। ভাবতে অবাক লাগে, এরা অতীতে পাশও করেছে। গিয়ে বসেছে সংসদেও। অথচ ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই জাতীয় সংসদ, এই জাতীয় সংবিধান-মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণেই থাকার কথা ছিল। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা শোষণের মানসিকতা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিশ্বে মৌলবাদীকে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। এখনও করছে।
নিউইয়র্ক, ২০ ডিসেম্বর ॥ ২০০৮
-----------------------------------------------------------------------
দৈনিক ডেসটিনি । ঢাকা । ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ বুধবার প্রকাশিত

প্রকৃতি হত্যার অপরাধ


প্রকৃতি হত্যার অপরাধ
ফকির ইলিয়াস
===========
বাংলাদেশে এখন শীত মৌসুম চলছে। শীতের চাদরে মোড়া গ্রামবাংলা। সদ্য কেটে তোলা ফসলের ধূসর মাঠ। কিছুটা শুষ্ক আবহাওয়া আর শিমুল-বকুল ফুলে সুশোভিত ফুটপাত। পৌষ-মাঘে বাংলাদেশের যে নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করা যায় তা সত্যি প্রাকৃতিক নৈসর্গিক এক অপহৃর্ব সমাহার। এ সময়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বিল-ঝিলগুলোকে আরো মুখরিত করে তোলে বিদেশি অতিথি পাখিগুলো।
বাংলাদেশে এসব পাখির দলগুলো আসে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, চীন, সাইবেরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। ওসব দেশে প্রচ- ঠান্ডা পড়ায় পাখিগুলো দল বেঁধে অবকাশ কাটাতে অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশে চলে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে এসে এসব পাখি নিরাপদ থাকতে পারে না। শিকারিদের জাল তাদের বন্দি করে। তারপর পাখিগুলো পণ্য হয় বাজারে বাজারে। শিকারিরা শিকার শিকার বলে চিৎকার দিতে দিতে পাখিগুলো বিত্রিক্র করে দেশের শহরে শহরে। উচ্চবিত্ত ধনীরা চড়া দামে পাখিগুলো কিনে নিয়ে তাদের রসনা তৃপ্তি জোগান।
বাংলাদেশে অতিথি পাখি নিধন চলছে গেল প্রায় দুই যুগ থেকেই। পাকিস্তান আমলে বড় ধনীরা বন্দুকের লাইসেন্স নিতেন। তারপর তারা দলবল নিয়ে বেরুতেন পাখি শিকারে। ঝাঁক ঝাঁক পাখির ওপর চলত তাদের কার্তুজ। তা ছিল এক ধরনের সামন্তবাদী মানসিকতার বিকৃত সুখ। পাখির মাংস বড় জমিদারদের ভোজনবিলাসে রকমারি আইটেম হতো।
মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বন্দুকের লাইসেন্সের ওপর কিছুটা কড়াকড়ি করার পর দলবেঁধে পাখি শিকারের প্রবণতা কিছুটা কমতে থাকে। তাছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিবেকবান মানুষের জাগ্রত বিবেকের কাছে হার মানতে থাকে সনাতনী মানসিকতা। বন্দুক বা এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকারের প্রবণতা অনেকটা কমে আসে; কিন্তু বেড়ে যায় বাণিজ্যিকভাবে জাল ফেলে পাখি ধরার কার্যত্রক্রম। সরকার এ ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করেও কোনো কার্যকর ভহৃমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি। এ বছরের শীতের শুরুতেই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গ, যশোর সীমান্তবর্তী এলাকা এবং সিলেটের জাফলং, তামাবিল, ভোলাগঞ্জ সীমান্ত অঞ্চলে পাখি ধরার ব্যাপক হিড়িক পড়েছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নাকের ডগার ওপর দিয়েই চলছে এসব শিকার। সুযোগে এসব সংস্থার সদস্যরাও কামিয়ে নিচ্ছে টু-পাইস।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে গেল কয়েক বছর ধরে ইলিশ উৎপাদন অত্যন্ত নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। বাজারে গত বছর ইলিশ মাছ ছিল দুষ্প্রাপ্য। যা পাওয়া গেছে তাও বিক্রি হয়েছে অত্যন্ত চড়া মূল্যে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রাণী বিজ্ঞানীরা গত ১০ বছর ধরেই সে আশংকা প্রকাশ করে আসছিলেন। বিশেষ কাজে জাটকা মাছ ধরার প্রবণতা থেকে সে আশংকা প্রকট হয়ে উঠেছিল। জাটকা নিধন বল্পব্দ করার জন্য সরকারি প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল না। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী জাটকা নিধন করে টাকা বানাতে ছিল তৎপর। সেই কুফল এখন দেশের জনগণ ভুগতে শুরু করেছেন।
বাংলাদেশের সুস্বাদু ইলিশ মাছের একটি ভালো বাজার ছিল বিদেশেও। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যের বাঙালি গ্রোসারিগুলোতে বাংলাদেশের ইলিশ মাছের ভালো কাটতি ছিল। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ২০০৭ সালের শেষদিকে নিউইয়র্কের বাঙালি গ্রোসারিগুলোতে বাংলাদেশের ইলিশ মোটেই পাওয়া যায়নি। সে স্থানটি এখন দখল করে নিয়েছে মিয়ানমারের তুলনামহৃলক কম সুস্বাদু অপুষ্ট ইলিশ। বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকেও।
এটা দুর্ভাগ্যজনক, প্রকৃতির ভারসাম্যতা রক্ষায় বাংলাদেশের সরকার ও সিংহভাগ জনগণ উদাসীন ভহৃমিকা পালন করছে। বৃক্ষ নিধন করে ব্যক্তিস্বার্থ, দলীয় স্বার্থ হাসিল করা হচ্ছে। প্রকৃতি হত্যার অপরাধটুকু কেউ অনুধাবনই যেন করতে পারছেন না। উজাড় হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বনাঞ্চল। কমে যাচ্ছে ত্রক্রমেই সবুজ আবহ।
পাখি, বাঘ, হরিণসহ প্রভৃতি প্রাণী নিধনের ব্যাপারে বন ও পশুপালন অধিদফতরের নিজস্ব আদেশ ক্রম রয়েছে। কিন্তু খোঁজ করলে দেখা যাবে অনেক পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রী, আমলাই অতিথি পাখির প্রধান ক্রেতা। হরিণের সুস্বাদু মাংস দিয়ে ভূরিভোজন তাদের প্রিয় সখের অন্যতম।
বাংলাদেশে দুর্লভ জাতের গুই, গোখরা সাপ মেরে এর চামড়া বিত্রিক্র করা হচ্ছে চড়া মহৃল্যে বিদেশে। তা করছে একটি সংঘবদ্ধ দল। মাছ, পাখি, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির দুষ্প্রাপ্য পশু-পাখি ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশেও এখন ইলিশ মাছ আমদানি করা হচ্ছে মিয়ানমার থেকে। আমদানি হচ্ছে অন্যান্য মাছও। পশু-পাখি সংরক্ষণ এবং পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের এগিয়ে আসা উচিত। কারণ এ সমস্যা একটি জাতীয় সমস্যা। দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হলে তার ভুক্তভোগী হতে হবে সারাদেশের মানুষকে। বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কি একটু দায়িত্বশীল হবে?
--------------------------------------------------------------------------
উপসম্পাদকীয় । দৈনিক সমকাল,ঢাকা। ৭ জানুয়ারী ২০০৯