Powered By Blogger

My Blog List

Popular Posts

স্বাগতম

আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি

Total Pageviews

Pages

Tuesday, April 5, 2011

ছিন্নভিন্ন গোলপাতা



ছিন্নভিন্ন গোলপাতা
----------------------------

গোলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন গোলপাতা। ক'টা শালুক হাতে
কিশোরীর লাশ।অনেকটা বেআব্রু । পড়ে আছে মাথার খুলি,
সারি সারি । হঠাৎ হায়েনার থাবায় কেঁপে উঠে বাংলার আকাশ।
পঁচিশে মার্চের কালোরাত দখল করে নেয় পশ্চিমা শকুন।

আমরা একটি ভূখন্ড নির্মাণে তুলি সমবেত হাত। প্রভাত ছিনিয়ে
নেবো বলে , উদ্বাস্তু তাঁবুর নীচে শানাই সঙ্গিন।

আমরা হারি নি কখনো। পূর্বপূরুষের গুল্মশক্তি বয়ে হয়ে উঠি
সিংহমানব-ব্যাঘ্রমানবী।
প্রয়োজনে ভস্ম হতে জানি , যুদ্ধমাদল বাজিয়ে ক্রমশ: বাড়িয়ে
যাই মেঘের বিস্তার।
হয়তো রক্তবৃষ্টি নামবে। তবু আমরাই জয়ী হবো , রুদ্রাক্ষ জোসনায়।

তিনটি সাম্প্রতিক কবিতা




তিনটি সাম্প্রতিক কবিতা
===================

মধ্যাহ্নের সাথে আলাপ
--------------------------

নগ্ন আকাশ দেখি দ্বিতীয় আভায় প্রাচীন পতঙ্গগুলো গোল
হয়ে তাকাচ্ছে সেই নগ্নতার দিকে আমি দর্শক নই , তবু
উঁকি দিয়ে দেখি, কারা এসে মিলিত হয়েছে এই আশ্রম
সীমানায় কীভাবে লিখিত হচ্ছে বিশ্রামের তন্দ্রানিয়মাবলী

আরো এসেছেন দেখতে যারা , তারা সবাই বিশিষ্ট নাট্যজন
নীড় নিয়ে খেলা করাই কাজ তাদের কখনও হাসিয়ে যান
কখনও কাঁদার দরোজা উন্মুক্ত করে দেন অবারিত হাতে
তাদেরকেও দেখে নিয়ে আমি, নেমে যাই চর্যাপদ কুড়াতে


জমিয়ে রেখেছি কটি পিনপতনের শব্দ হাতে আছে কফির
গরম ধোঁয়া নিম্নগামী তারা ছুঁয়ে যাচ্ছে যে টিয়ে পাখি ,তাকে
প্রশ্ন করছি গন্তব্য জানতে চেয়েমাঝে মাঝে আমি এমন অনেক
কিছুই জানতে চাই বৈশাখী তান্ডবের কাছে, শ্বেতাঙ্গ সমুদ্র
আর কালো পাহাড়ের কাছে মর্ত্যমনন এসে আমাকে বোধ
হয় সে জন্যই দেয় পাহারা যাতে উন্মত্ত না হই কিন্তু তার
পরও তো আমাকে কেউ থামাতে পারে না , যখন বলি তোমাকে –
বিছিয়ে দাও উত্তপ্ত জমিন কয়েকটি মধ্যাহ্ন চাষ করে যাবো


মনমিশ্রণ

------------
পুরু কাঁচের ছায়া নিয়ে খেলছে সূর্য চাঁদের যৌনজীবন
নিয়ে শেষ কবিতাটি লেখা হচ্ছে মনিষার হাতে ব্যাংলোর
নগরে বসে সে ই নিয়ন্ত্রণ করছে সবটুকু নির্জন গৌরব

যারা শিখেছে উপস্থাপনবিদ্যা , তারাই পারছে আজকাল
সবকিছু, পারছে সূর্যকেই গিলিয়ে দিতে কয়েকফোটা
মেঘ আর প্রকাশ্যে গাইছে সিটিসেলের মুগ্ধ জয়গান

মানুষ কীর্তনের সন্ধ্যাকে কখনো নিজের প্রশস্থিগীতি
বলেই মনে করে মদমিশ্রণে মনকে ডুবিয়ে দিয়ে
বার বার উপলব্ধি করতে চায় মিলননাট্যের সুপ্ত আবহাওয়া


সূত্র সমীপে লিখি বিনয় বন্দনা

-------------------------------------
বদলে দেবার প্রত্যয় নিয়ে লিখি স্রোতজ সূত্র আরেকবার মুগ্ধ
হয়ে দেখি অর্জনের বৃহস্পতি গ্রহগুলো আমার বলয় থেকে পালিয়ে
ছিলো এতদিন আজ আমি নাগালে পেয়ে এর মাঝে খুঁজে ফিরি
হারানো উত্থানের মুখ

আমার সহযাত্রী যারা , তারা এর আগে লিখে গেছে তাদের প্রাপ্তি
নিয়মাবলী হাতের কোদাল দিয়ে মাটি কেটে গড়েছে পুষ্পদ্বীপ
সেখানে লাগিয়েছে গোলাপের চারা পাহারা দিয়ে ফুটিয়েছে ফুল

সূত্র সমীপে আমি লিখি সেই বিনয় বন্দনা, ছুঁয়ে যেতে পরাগ সমূল…

ফকির ইলিয়াস এর একগুচ্ছ কবিতা




ফকির ইলিয়াস এর একগুচ্ছ কবিতা









প্রত্যক্ষ সম্বন্ধ ও দুর্ভিক্ষবিষয়ক সেমিনার

----------------------------------------------
নীতি নির্ধারণী বৈঠকের বনভোজনে আমরা আমন্ত্রিত হয়েছি
এই দ্বিতীয়বার। ‘গ্রীনহর্স’­ ব্র্যান্ডের সাথে আমাদের প্রত্যক্ষ
সম্বন্ধ বেড়ে উঠেছে এভাবেই। যেভাবে পাঁজরবিহীন কোনো
সূর্যাহত কৃষক সন্তান বেড়ে উঠে সমান্তরাল। কাল-আকালের
বৃষ্টিছন্দ মাড়িয়ে। তারপর মাটির প্রচ্ছদে আঁকে নিজের ছবি।
কবি হলে লিখতে পারতো বিরহের কবিতা।
মঙ্গার মাদুর জড়ানো জীবনের জলকলা। বন্দনার দগ্ধ বিধুরতা।
ছাদহীন, চাঁদহীন শৈশবের পথধরে গড়ে উঠা প্রথার বিরুদ্ধে প্রথা।

সরল সলতেকথা
----------------------
আনন্দের উত্থান দেখি ঢেউয়ের মননে। চিনে রাখি এইসব
লঘু রোদের ঋতি। ইতি টেনে এসেছি সকল মৌন বৈভবের।
কালের কলতানে হারিয়ে গেছে যে গান, তারও স্বরলিপি খুঁজে
বাজাই এস্রাজ। সাজ , সম্ভাষণ সব ভুলে সমবেত হই সকালের
অমোঘ শয্যায়। প্রায় প্রতিভোরে যে পাখি পালক ফেলে যায় ,
আমি করি তারও সন্ধান। প্রাণের আগুনে জ্বালাই সলতের সুতো।
দ্রুত চলে যাই মেঘনার বিমুগ্ধ মোহনায়।দেখি আহত পাখিটি উড়ে যায় ..


ধানী জমির ধ্যানে মগ্ন যে জীবনের গান
...............................................................................

তোমার প্রিয় তালিকায় আমার নাম নেই , তা আমি দেখেছি। কিংবা তোমার লিংক সাম্রাজ্যে নেই আমার নীড়ছবি। তাও অজানা নয় আমার। মেরু বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক সেরে ষ্টকহোম থেকে ফেরার পথে ওর সাথে নিবিড় দেখা হয়েছিল আমার। বলেছিলো, বোষ্টনে যাচ্ছি। ঘুরতে। বলেছিলাম, ফেরার পথে নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব ন্যাশনাল হেরিটেজ দেখে যাবার আমন্ত্রণ রইলো।

এর ঠিক তিনদিন পর বেজে ওঠে ফোন। সেই পরিচিত কন্ঠ। সময় হবে ? প্রশ্ন শোনে সেরে নিই প্রস্তুতি পর্ব। তারপর দেখা হয়ে যায়। আবারও শোনাই পাল তোলা নৌকোর গল্প। ধানী জমির ধ্যানে মগ্ন জীবনের গান। ও আমার গল্প শোনে তন্ময় হয়ে।

মানুষকে এভাবেই তন্ময় হয়ে যেতে হয়।আর পুঁজিতে জমা রাখতে হয় সমুদ্রের ফেনা।এই পৃথিবী আবার ফিরবে কালের জোয়ারে, সেরে নিতে সব লেনাদেনা।


তবে কী গৃহীত হবো না-------------------------------
দুপুরের দরোজা খুলতেই দেখি, আমার বুকের
ভেতরে ঢুকে পড়ছে একটুকরো মেঘ। জমাট সূর্য
তার অসমাপ্ত সত্ত্ব নিয়ে লিখাচ্ছে নাম ঘাসের পাঁজরে,
আর বুড়ো নদী তার প্রাগৈতিহাসিক তারুণ্য ধারণ
করে জানাচ্ছে প্রণাম জলকে , জলাশয়কে।

পকেটে কলমের কংকাল দেখে আমিও স্মরণ করতে
চাইছি আমার পুরো নাম। ঠিকানার প্রাচীন ইতিহাস।
এর আগে ছিলাম কোথায়, ইত্যাদি সময়ের রূপরেখা।
আর ভাবছি যে ইট একদিন নিজে পোড়ে , স্তরে স্তরে
সাজিয়েছিল দালান – সেই ইমারতের আলোয় যে
মানব- মানবী দাঁড়িয়ে আজ করছে প্রেমালাপ, তাদের
পূর্বসূরিরা কী তাকিয়েছিল পশ্চিম আকাশে – ভেসে যাওয়া
মেঘ দেখার সবুজ অপেক্ষায় !
অথবা এটাও ভাবছি বলা যায়, যে হেমন্ত মাঠের আঙিনায়
একটি দোয়েল ছায়া খুঁজে করছে বিলাপ
তার মতোই , আমিও কী এই মাঠালয়ে আরেকজন বন্দী
হিসেবে কখনওই গৃহীত হবো না !